কী কথা তাহার সাথে

জাদু মিয়া ও শকুনের গল্প

মেঘের পরে মেঘ জমেছে। চক্রাকারে উড়ছে সোনালি ডানার চিল। গুমোট পরিবেশ, চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। গাছের শাখায় ওত পেতে আছে শকুন। তীক্ষ্ম দৃষ্টি জাদু মিয়ার উপর। তার মরণের অপেক্ষা। সবাই প্রতিদিন ভাবে আজই বোধ হয় শেষদিন। তবুও তিনি দিব্যি বেঁচে আছেন।

সাতদিন পানি ছাড়া কিছুই খাননি। লোকমুখে একটাই কথা, ‘ক্যাং করি সম্ভব?’ জাদু মিয়ার মাঝেমধ্যে মনে হয় তিনি হয়তো বেঁচে নেই। সব তার কল্পনার অংশ। মন-কুঠুরিতে জমে থাকা অসংখ্য ছোটো গল্প তার স্মৃতিপটে ভাসতে থাকে। যেগুলো ভেবে তিনি অনেক সুখ পান আর অজান্তেই হেসে ওঠেন।

জনম দুঃখী জাদু মিয়া যেদিন ঘর ছেড়ে বড়ো এই গাছটার নীচে এলেন-চারদিকে দেখে তার মন শান্ত হয়ে গেল।

গাছটার বয়স এখন প্রায় দুশত বছর। একই রকমভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে। নীচের দিকে কোনো পাতা নেই। দৃষ্টি সীমানা এড়িয়ে শুধুই সবুজের বন। ছাতা হয়ে যুগ যুগ ধরে এলাকার সবাইকে গাছটি ছায়া দিয়ে চলেছে। মোটা গাছটাতে অনেক বিশাল বিশাল গর্ত। যেগুলোর ভিতর বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের ঘরবসতি। বিশালকায় একটা অজগর দেখা গিয়েছিল একবার। দেখামাত্রই পাগলা মফিজ অজ্ঞান। তারপর আর কেউ কোনোদিন সেটা দেখতে পায়নি। ঘটনাটা সত্যি হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবুও লোকজন গল্পটা করে আজও মজা পায়। ঠিক যেমন জাদু মিয়ার গল্প করে এখন মজা পাচ্ছে।

রোদ-ঝড়-বৃষ্টি-ধুলোবালি উপেক্ষা করে একজন শুয়ে-বসে আছে। কেউ তাকে সরাতে পারছে না। মানুষটার সাদা চুলের পুরোটাই জট বাঁধা। দীর্ঘদিন না কাটার কারণে মেয়েলি রূপ ধারণ করেছে।

দুদিন ধরে জাদু মিয়া একটা অদ্ভুত জিনিস খেয়াল করছেন। চাইলেই তিনি শূন্যে ভেসে থাকতে পারছেন। মাঝরাতে চাঁদ যখন ঠিক মাঝ আকাশে থাকে—বড়ো গাছটায় তখন আর কোনো ছায়া পড়ে না। ঠিক সেই সময় চারদিকে জোছনার আলো ফিকরে বের হয়ে আসে। তার শরীর তখন হালকা হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মাটি থেকে তিনি উপরে ভাসতে শুরু করেন। গতকাল এরকমই এক সময় ভয়ে তিনি চিৎকার করে ওঠেন। তার হাত, পা কেমন যেন অবশ হয়ে আসে। ধুপ করে পড়ে গিয়ে কোমরে ভীষণ ব্যথা পান। না খাওয়া শরীূর সেই ধকলটা সামলাতে পারেনি। তীব্র ব্যথাটা এখনো তিনি বেশ অনুভব করছেন। তাই চুপচাপ তিনি শুয়ে আছেন।

চোখ মেলতে ইচ্ছে করছে না। সকালের সোনাঝরা রোদ এসে পড়ছে তার মুখে। বেশ আরাম বোধ করছেন। বুঝতে পারছেন কেউ একজন তার পাশে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে। মরে গেছেন কি না এটা হয়তো বোঝার চেষ্টা করছেন।

—জান আছে। শ্বাস নেয়ছে। চোউখ তো মেইলছে না। গায়ত হাত দেইম। সোগাক ডাকাও।

নিমিষেই বেশ কয়েকজন জড়ো হলো। সবার মধ্যে অনেক কৌতূহল। সবচেয়ে বেশি কৌতূহল গাছের মাথায় বসে থাকা শকুনগুলোর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *